শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন
জিয়াউর রহমান, কানাইঘাট (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা:
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাচনের আর মাত্র ছয় দিন বাকি। দিন যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীরা প্রচারণা, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকের প্রতি ততো বেশি তৎপর হচ্ছেন। প্রচার গাড়ীগুলো ক্রমেই গ্রামকে গ্রাম ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাজার হাট আর রেস্তরাগুলোতে এখন আলোচনার মূল ইস্যু নির্বাচন। একজন এক প্রার্থীকে বিজয়ী দেখাচ্ছে আবার অন্যজন ঐ প্রার্থী ধরাশায়ী হবেন বলে যুক্তিটুক্তিও দেখাচ্ছেন। মাতামাতির পরিধি শুধুমাত্র স্ন্যাকবার আর রেস্তুরা হলেও গ্রাম-গঞ্জে এবারের নির্বাচনের কোন প্রভাব নেই। নারী ভোটারহীন ভোটকেন্দ্র থাকার পাশাপাশি পুরুষ ভোটারদের অনেকেই বলছে, রাতের আধারে যখন বক্স ভর্তি হয়, প্রবাসী, অসুস্থ ও মৃতরা যখন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে আমাদের ভোট দেয়ার মাঝে কোনো সার্থকতা আছে বলে মনে করি না। বিরোধীদল শূন্য আমেজহীন নির্বাচন হলেও, আগের মতো শুরগুল না থাকলেও ভোট হবেই। আবার যেকোন দুজন শেষ হাসি হাসবেনও। কানাইঘাট উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। তিনজনের দলীয় পরিচয় আওয়ামীলীগ। লড়াইও হবে ত্রিমুখী। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন পৌরসভাধীন দুর্লভপুর গ্রামের জনাব আব্দুল মুমিন চৌধুরী।
এদিকে আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা, ৪নং সাতবাক ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশ চেয়ারম্যান পদে মোটর সাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ৮নং ঝিংগাবাড়ি ইউনিয়নের কাপ্তানপুর গ্রামের খায়ের আহমদ চৌধুরী আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছেন। মূলত চেয়ারম্যান পদে তিনজন হলেও লড়াইটা হবে ত্রিমুখী। মুমিন চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করায় তার আলোচনা সর্বত্র। তাছাড়া তিনি ব্যক্তি হিসেবে সচ্চরিত্রবান ও দানবীর। সবদিকে মিলিয়ে আলোচনার শীর্ষে আছেন আব্দুল মুমিন চৌধুরী।
অপরদিকে মস্তাক আহমদ পলাশ বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে কানাইঘাট উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। কানাইঘাটের সর্বত্র রয়েছে তার কর্মীবাহিনী। সে হিসেবে তাকে নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে বেশ জোরালোভাব।
এদিকে খায়ের আহমদ চৌধুরী ব্যক্তি হিসেবে কানাইঘাটে অতটা পরিচিত না হলেও তিনি অতি সূক্ষ্মভাবে এলাকাভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছেন। ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়ন, ৮নং ঝিংগাবাড়ি ও ৭নং দক্ষিণ বানীগ্রাম ইউনিয়নই হচ্ছে তার শক্তি। ইউনিয়নয়েও তাকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। যদি তিনটি ইউনিয়নকে নিয়ে শেষপর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, তবে তিনিই হচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
ভাইস চেয়াম্যান পদে নির্বাচন করছেন মোট ৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন মাইক প্রতীকে সাংবাদিক শাহীন আহমদ, চশমা প্রতীকের মাওলানা আব্দুল্লাহ শাকির, তালা প্রতীকের আব্দুল ওদুদ, টিউবওয়েল প্রতীকের এমাদ উদ্দীন, টিয়াপাখি প্রতীকের হাকিম রব্বানী (ঈসা)। এদের মধ্যে মূল আলোচনায় আছেন সাংবাদিক শাহিন ও মাওলানা আব্দুল্লাহ শাকির।
মুমিনপন্থী আওয়ামীদের সাথে হয়েছে তার সমঝোতা। ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত না হলেও দারুল উলূম কানাইঘাট তথা জমিয়তে উলামার সাপোর্ট নিয়ে তিনি নির্বাচন করছেন। কানাইঘাট দারুল উলূম মাদ্রাসা কেন্দ্রিক রিজার্ভ ভোট ব্যাংকই তার পুঁজি। আলোচনার শীর্ষে থাকলেও তাকে নিয়ে রয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। একজন আলেম হিসেবে আলেম সমাজের নিকট তিনি যেভাবে আলোচিত হওয়ার কথা সেদিক দিয়ে তিনি ততোটা এগিয়ে নন। কেউ কেউ আবার তাকে তাবলীগ জামাতের সৃষ্ট সমস্যার মূল মাওলানা সাদের অনুসারী বলে বিতৃষ্ণা জাহির করছে। বাস্তবেও তার ফেবু আইডিতে এর নজির বিদ্যমান। সবদিক মিলিয়ে তিনি যেভাবে আলোচিত ঠিক এভাবে সমালোচিত। সব মিলিয়ে চেয়ারম্যান ও ভাইসচেয়াম্যান পদে লড়াই হবে ত্রিমুখী। শেষ হাসি কার? তা জানতে অপেক্ষা করুন ১৮ই মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত।